আগরতলা, ২৬ এপ্রিল ।। পশ্চিম ত্রিপুরার লোকসভা আসনের পর এবার পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসনেও সম্পূর্ণ অবাধ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সম্পন্ন হলো নির্বাচন৷ এই উপলক্ষে কোথাও একটিও দুর্ঘটনার তথ্য নেই৷ রাজ্য নির্বাচন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী রাত আটটা পর্যন্ত ভোট হয়েছে প্রায় ৮১ শতাংশ৷ যদিও এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে৷ দুই আসনেই ভোটপর্ব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ায় রাজ্যবাসীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক৷ গত ১৯ এপ্রিল শান্তিপূর্ণ উপায়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভা আসনের ভোট৷পশ্চিম ত্রিপুরায় লোকসভা ভোটের হার ছিল ৮১.৫২ শতাংশ৷ শুক্রবার অনুষ্ঠিত পূর্ব ত্রিপুরা আসনেও ভোটদানের হারও প্রায় সমান বলা চলে৷ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক পুণীত আগরওয়াল জানিয়েছেন, ২-ত্রিপুরা পূর্ব (এসটি) সংসদীয় নির্বাচনী ক্ষেত্রে রাত ৮টা পর্যন্ত পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৮০.৩২ শতাংশ ভোট পড়েছে৷ কিছু কিছু ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে এখনও ভোটগ্রহণ চলছে৷ পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক জানান- প্রথম পর্যায়ের মতো দ্বিতীয় পর্যায়েও আজ ভোটারগণ শান্তিপূর্ণভাবে ভয়মুক্ত পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন৷ এরজন্য সমস্ত ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি৷ দুই আসনেই ভোটদান পর্বকে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করায় ও নির্বাচনে সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রার্থীগণ ও সংবাদমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শ্রী আগরওয়াল৷ তিনি বলেন, সবার সহযোগিতার জন্যই গত ১৯ এপ্রিল প্রথম পর্যায়ে এবং আজ দ্বিতীয় পর্যায়েও হিংসামুক্ত পরিবেশে ভোটগ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে৷ উল্লেখ্য, আগামী ৪ জন, ২০২৪ রাজ্যের ২০টি গণনা কেন্দ্রে ২টি সংসদীয় ক্ষেত্রের ভোটগণনা করা হবে৷ বলাবাহুল্য যে, দ্বিতীয় পর্যায়ে পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণের জন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ ফলে উৎসবমুখর মেজাজে নাগরিকরা তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন। এদিন সকাল ৭–টা থেকে পূর্ব ত্রিপুরা আসনের সব বুথে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত| এদিন বিশিষ্টদের মধ্যে ভোট দিয়েছেন মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, মন্ত্রী টিঙ্কু রায়, মন্ত্রী সুধাংশু দাস, মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা, মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন, বিজেপির পূর্ব ত্রিপুরার প্রার্থী কৃতি সিং দেববর্মা, বিধানসভার মুখ্য সচেতন কল্যাণী সাহা রায়, প্রাক্তন মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব, কংগ্রেস বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা, ইন্ডি জোটের প্রার্থী রাজেন্দ্র রিয়াং এবং অন্যান্য নেতারা৷ পূর্ব ত্রিপুরায় শান্তিপূর্ণ ভোট সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন ৮৫ কোম্পানি নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করেছিল। এছাড়া মোট ১,৩৬৫ জন মাইক্রো অবজারভার নিয়োগ করা হয়েছিল। রাজ্যের ৩০টি বিধানসভা আসন নিয়ে পূর্ব ত্রিপুরা জনজাতি সংরক্ষিত সংসদীয় আসন৷ ভোটকেন্দ্রগুলিতে পানীয় জল, আলো, দিব্যাঙ্গদের জন্য রেম্প, টয়লেট, ইত্যাদি সুবিধা সব ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই আসনের অধীনে নথিভুক্ত সাধারণ ভোটারদের সংখ্যা ২৮,৬০,২৮৭। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪,৩৬,৬৪৪, মহিলা ভোটার ১৪,২৩,৫৭৪ এবং তৃতীয় লিঙ্গ ৬৯ জন৷ এই আসনে মোট ৯ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়েছে এদিন৷ প্রার্থীরা হলেন বিজেপি’র কৃতি দেবী সিং দেববর্মণ, ইন্ডিয়া জোট সমর্থিত সিপিআইএম প্রার্থী রাজেন্দ্র রিয়াং তাছাড়া বাকি ৭ জন নির্দল প্রার্থীরা হলেন কৃষ্ণ মোহন জমাতিয়া, দর্শন কুমার রিয়াং, কল্প মোহন ত্রিপুরা, শত্রুঘ্ন জমাতিয়া, অর্চনা উরাং, শিবচন্দ্র দেববর্মা ও সান্তোজয় ত্রিপুরা। পূর্ব ত্রিপুরায় মোট ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ছিল ১,৬৬৪টি। এরমধ্যে মডেল ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ৬১টি, মহিলা পরিচালিত ৬৭টি, দিব্যাঙ্গ ৩০টি এবং যুবা ভোটকর্মী দ্বারা পরিচালিত ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ছিল ৩০টি। তাৎপর্যপূর্ণ ছিল- এবারই প্রথম ত্রিপুরায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ১৬,২৬০ জন ব্রু ভোটার। নির্বাচনের কাজ তদারকির জন্য নির্বাচন কমিশনের সাধারণ পর্যবেক্ষক ছিলেন ২ জন, পুলিশ পর্যবেক্ষক ২ জন এবং ১ জন ব্যয় সংক্রান্ত পর্যবেক্ষক ছিলেন। মাইক্রো অবজারভার ছিলেন ১,৩৬৫ জন। সকাল থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে সর্বত্র ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ দুই একটি স্থানে ভোটযন্তে্রর গোলযোগের কারণে সমস্যা হলেও পরবর্তী সময়ে মেরামত করে অথবা পরিবর্তন করে ভোট প্রক্রিয়া শুরু করা হয়৷ এদিন সর্বত্র দেখা গেছে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন৷ নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল গোটা পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসনেই৷ ফলে বিরোধী দলের তরফেও কোনো অভিযোগ শুনতে পাওয়া যায়নি৷ রাজ্যের ইতিহাসে এমন রক্তপাতহীন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের নজির অতীতে দেখা যায়নি বলেই অভিমত রাজনৈতিক তথ্যভিজ্ঞ মহলের৷ তবে সকাল সকাল ভোটাররা বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভোটদান করার জন্য শমিল হন নিজ নিজ ভোট কেন্দ্রে। প্রচণ্ড গরমে মাথার ওপর কাঠফাটা তপ্ত রোদ, তার পরও ভোটারদের মধ্যে ভোট দেওয়ার জন্য আগ্ৰহ দেখা যায়। বেলা যত বাড়ে ভোটাররা তাঁদের মতাধিকার প্রয়োগ করার জন্য নিজ নিজ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দাঁড়িয়ে যান। তবে প্রতিটি কেন্দ্রেই দেখা যায় গরমের যন্ত্রণায় হাঁসফাঁস অবস্থা ভোটারদের। মহিলা পুরুষ ভোটারদের পাশাপাশি নতূন ভোটারদের উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গেছে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে।